মেয়েদের ১০০টি জনপ্রিয় ও সুন্দর ইসলামিক নাম, নামের অর্থ ও সঠিক ইংরেজি বানান সহ দেখে নিন।

নবজাতকের সুন্দর, অর্থবহ এবং শ্রুতিমধুর নাম রাখার গুরুত্ব সম্পর্কে আমাদের প্রিয় নবী (সা.) বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেছেন, মুসলমানিত্ব প্রকাশ পায়—এমন নামকরণের ক্ষেত্রে যত্নবান হতে। 
তাই মাতা-পিতা এবং অভিভাবকদের দায়িত্ব হলো সন্তানের জন্য একটি ভালো, অর্থপূর্ণ এবং শ্রুতিমধুর নাম নির্বাচন করা। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে জানা যায়, সাহাবায়ে কেরাম নবী (সা.)-এর কাছে জানতে চাইলেন, "হে আল্লাহর রাসুল! মাতা-পিতার হক কী?" নবী (সা.) তখন বলেন, "মাতা-পিতা সন্তানের জন্য সুন্দর নাম রাখবে এবং তাকে সুশিক্ষা দেবে।" (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৭০)

আরেকটি হাদিসে আবু দারদা (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, "কিয়ামতের দিন তোমাদের নাম এবং তোমাদের পিতার নামসহ ডাকা হবে। তাই, তোমরা ভালো নাম রাখবে।" (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৬৪)
অতএব, অভিভাবকরা যদি এ গুরুদায়িত্ব পালনে গাফিলতি করেন, তবে কিয়ামত দিবসে তাদের এ বিষয়ে জবাবদিহি করতে হবে।

সর্বাপেক্ষা সুন্দর নাম

সর্বাপেক্ষা সুন্দর এবং পছন্দনীয় নাম হলো আম্বিয়া, আউলিয়া ও বুজুর্গদের নাম। নবজাতককে এ সকল পুণ্যাত্মার নাম রাখলে, শিশুর জীবনও তাদের আলোকোজ্জ্বল আদর্শ দ্বারা উদ্ভাসিত হবে। নবী (সা.) বলেছেন, "তোমরা নবীদের নামে নাম রাখো, ফেরেশতাদের নামে নাম রাখো।" (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৮৪৩)

এইভাবে নাম রাখার প্রথা কেবল সন্তানকে নয়, বরং তার ভবিষ্যতের সঙ্গেও সংযুক্ত। নামের মাধ্যমে সন্তানের পরিচয়, সামাজিক অবস্থান ও পরিচর্যা ফুটে ওঠে। তাই, অভিভাবকদের উচিত একটি সুন্দর নাম রাখার ক্ষেত্রে সচেতনতা অবলম্বন করা।

মেয়ের নামের গুরুত্ব ও ভূমিকা:

মেয়েদের নাম নির্বাচন করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কারণ নামটি তাদের পরিচয় এবং সামাজিক অবস্থানকে প্রতিনিধিত্ব করে। ইসলামে নামের মাধ্যমে ভালো কাজের প্রতি উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি একটি সুন্দর চরিত্র গড়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সুন্দর এবং অর্থবহ নাম একজন মেয়েকে আত্মবিশ্বাসী ও স্বতন্ত্র হতে সাহায্য করে। 

মেয়েদের ১০০টি জনপ্রিয় ও সুন্দর ইসলামিক নাম, নামের অর্থ ও সঠিক ইংরেজি বানান সহ দেখে নিন।

নিচে ১০০টি জনপ্রিয় ও সুন্দর ইসলামিক মেয়ের নাম, তাদের অর্থ ও ইংরেজি বানান দেওয়া হলো:

১. ফাতিমা - অর্থ নবীজীর কন্যা (Fatima)  
২. আসিয়া - অর্থ প্রতিশ্রুতিশীল (Asiya)  
৩. আয়েশা - অর্থ জীবন্ত, সুখী (Aisha)  
৪. জয়নব - অর্থ বুদ্ধিমতী (Zainab)  
৫. খাদিজা - অর্থ বিশ্বাসযোগ্য, বিশ্বস্ত (Khadija)  
৬. সাবিহা - অর্থ সুন্দরী (Sabiha)  
৭. হামিদা - অর্থ প্রশংসিত (Hamida)  
৮. নাবিলা - অর্থ Noble, উদার (Nabila)  
৯. আলিয়া - অর্থ উচ্চ, সম্মানিত (Aliya)  
১০. সারা - অর্থ সৎ, খুশি (Sara)  
১১. জান্নাত - অর্থ স্বর্গ (Jannat)  
১২. রুকাইয়া - অর্থ উন্নতি, প্রগতি (Ruqayyah)  
১৩. লায়লা - অর্থ রাত, সুন্দরী (Laila)  
১৪. মাহিয়া - অর্থ পানি, প্রাণবন্ত (Mahiya)  
১৫. মায়া - অর্থ মায়াময় (Maya)  
১৬. সোহানা - অর্থ সুখী, সুন্দর (Sohana)  
১৭. তাবাসসুম - অর্থ হাস্যোজ্জ্বল (Tabassum)  
১৮. আয়াত - অর্থ সাইন, আল্লাহর কথা (Ayat)  
১৯. নিশাত - অর্থ আনন্দ (Nishat)  
২০. জুবাইরাহ - অর্থ শান্ত (Zubairah)  
২১. রওশনি - অর্থ আলোর উৎস (Roushni)  
২২. জাহরা - অর্থ ফুল (Zahra)  
২৩. মালিকা - অর্থ রাণী (Malika)  
২৪. শারমিন - অর্থ সুন্দরের মায়া (Sharmeen)  
২৫. এmina - অর্থ নিরাপদ, বিশ্বাসযোগ্য (Amina)  
২৬. ফারহানা - অর্থ সুখী (Farhana)  
২৭. তাসনীম - অর্থ স্বর্গীয় পানির একটি ঝরনা (Tasneem)  
২৮. নুসরত - অর্থ সাহায্য (Nusrat)  
২৯. ইয়াসমিন - অর্থ ফুল (Yasmin)  
৩০. রানা - অর্থ গর্বিত (Rana)  
৩১. রাহেলা - অর্থ সঙ্গী (Raheela)  
৩২. সাকিনা - অর্থ শান্তি (Sakina)  
৩৩. মারিয়া - অর্থ পবিত্র (Maria)  
৩৪. সুমি - অর্থ উজ্জ্বল (Sumi)  
৩৫. আফরিন - অর্থ প্রশংসা (Afrin)  
৩৬. দিহা - অর্থ উজ্জ্বলতা (Diha)  
৩৭. রোজিনা - অর্থ সুন্দর (Rozina)  
৩৮. সাদিয়া - অর্থ সুখী (Sadia)  
৩৯. আমনা - অর্থ নিরাপদ (Amna)  
৪০. লাবিবা - অর্থ চতুর (Labiba)  
৪১. আফিয়া - অর্থ স্বাস্থ্য (Afiya)  
৪২. আনহা - অর্থ আল্লাহর নির্দেশ (Anha)  
৪৩. মালিহা - অর্থ সুন্দরী (Maliha)  
৪৪. রানিয়া - অর্থ রাণী (Rania)  
৪৫. খালিসা - অর্থ বিশুদ্ধ (Khalisa)  
৪৬. সোহিনী - অর্থ সুন্দরী (Sohini)  
৪৭. নাওয়ারা - অর্থ আলো (Nawara)  
৪৮. সিমা - অর্থ রূপ (Sima)  
৪৯. তাকিয়া - অর্থ সুরক্ষা (Taqiya)  
৫০. দয়া - অর্থ করুণাময় (Daya)  
৫১. আসমা - অর্থ মহান, উচ্চ (Asma)  
৫২. বিলকিস - অর্থ রাজকন্যা (Bilqis)  
৫৩. দিমা - অর্থ মেঘের বর্ষণ (Dima)  
৫৪. রিমা - অর্থ সাদা হরিণ (Rima)  
৫৫. নার্গিস - অর্থ ফুলের নাম (Nargis)  
৫৬. আনিকা - অর্থ সুন্দরী (Anika)  
৫৭. রাইহানা - অর্থ সুগন্ধি ফুল (Raheena)  
৫৮. সাথা - অর্থ শক্তিশালী (Satha)  
৫৯. নওরোজ - অর্থ নতুন দিন (Nowruz)  
৬০. লাবণ্য - অর্থ সৌন্দর্য (Labanya)  
৬১. নাদিয়া - অর্থ প্রথম (Nadia)  
৬২. রহিমা - অর্থ দয়ালু (Rahima)  
৬৩. সুনায়না - অর্থ সুন্দরী (Sunaina)  
৬৪. বুশরা - অর্থ সুখবর (Bushra)  
৬৫. মীনা - অর্থ রত্ন (Meena)  
৬৬. জাসিমা - অর্থ বিশাল (Jasima)  
৬৭. সানিয়া - অর্থ উৎকৃষ্ট (Sania)  
৬৮. হামিদা - অর্থ প্রশংসিত (Hamida)  
৬৯. সিদরা - অর্থ গাছের নাম (Sidra)  
৭০. লায়জা - অর্থ লাবণ্য (Laiza)  
৭১. মারিয়া - অর্থ প্রিয় (Maria)  
৭২. এলাহি - অর্থ আল্লাহর (Ilahi)  
৭৩. রহান - অর্থ শান্তি (Rahan)  
৭৪. সাবিহা - অর্থ সুবর্ণ (Sabiha)  
৭৫. জান্নাতুল - অর্থ স্বর্গীয় (Jannatul)  
৭৬. ফাইজা - অর্থ সফল (Faiza)  
৭৭. কুনজ - অর্থ স্বর্গের আনন্দ (Kunj)  
৭৮. রিবা - অর্থ বৃদ্ধির (Riba)  
৭৯. আভা - অর্থ আলো (Ava)  
৮০. যাহরা - অর্থ ফুল (Zahra)  
৮১. মনিসা - অর্থ সুন্দরী (Monisa)  
৮২. সাহার - অর্থ ভোর (Sahar)  
৮৩. ইশরাত - অর্থ প্রভাত (Ishrat)  
৮৪. জুবাইরাহ - অর্থ নিরাপদ (Zubairah)  
৮৫. নাবিলা - অর্থ উদার (Nabila)  
৮৬. শায়লা - অর্থ গান (Shaila)  
৮৭. গায়াত্রী - অর্থ বিদ্যা (Gayatri)  
৮৮. ফাতেনা - অর্থ প্রভাবিত করা (Fatena)  
৮৯. নেহার - অর্থ সূর্যাস্ত (Nehar)  
৯০. রোজী - অর্থ আনন্দময় (Rozi)  
৯১. আশা - অর্থ আশা (Asha)  
৯২. তাসনীমা - অর্থ পবিত্র পানির উৎস (Tasneema)  
৯৩. নাসিমা - অর্থ বাতাস (Nasima)  
৯৪. এলিজা - অর্থ উজ্জ্বল (Eliza)  
৯৫. মুনিরা - অর্থ উজ্জ্বল (Munira)  
৯৬. কল্পনা - অর্থ কল্পনা (Kalpana)  
৯৭. অভিয়া - অর্থ প্রার্থনা (Abhya)  
৯৮. ফাল্গুনী - অর্থ ফুলের (Phalguni)  
৯৯. নুরজাহান - অর্থ আলোর মহল (Nur Jahan)  
১০০. আকিলা - অর্থ বুদ্ধিমান (Akeela)

নাম রাখার জন্য কিছু উপদেশ ও পরামর্শ:

1. অর্থের গুরুত্ব: নামের অর্থ অবশ্যই ভালো এবং ইতিবাচক হওয়া উচিত। নেতিবাচক অর্থের নাম এড়ানো উচিৎ।

2. ইসলামিক নাম নির্বাচন: ইসলামী ঐতিহ্য অনুযায়ী নাম নির্বাচন করুন। নবী, সাহাবী এবং পবিত্র কোরআনের মহান নারীদের নাম রাখতে পারেন।

3. বিকল্প চিন্তা: একটি নামের বিকল্প নাম নির্বাচন করুন যাতে নামটি সহজ এবং প্রাঞ্জল হয়।

4. পরিবারের পরামর্শ: নাম রাখার ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের এবং ধর্মীয় গুরু বা হুজুরদের পরামর্শ নিন।

5. বিশ্বাস: মনে রাখুন, নামের মাধ্যমে সন্তানের পরিচিতি দেওয়া হয়, তাই নাম নির্বাচনে সতর্ক থাকুন এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করুন। 

তাই সর্বদা চেষ্টা করুন যে, নামটি যেন সন্তানের ভবিষ্যতের সাথেও মানানসই হয়।
ইসলামে বিয়ে সহজ, বর্তমানে দেনমোহরের অযুহাতে আমাদের সমাজে বিয়েকে কঠিন করা হয়েছে

ইসলামে বিয়ে সহজ, বর্তমানে দেনমোহরের অযুহাতে আমাদের সমাজে বিয়েকে কঠিন করা হয়েছে

2023-02-03T07:49:00+06:00

আমাদের সমাজে দেনমোহর এর অযুহাতে বিয়েকে কঠিন করা হয়েছে অথচ ইসলামে বিয়েকে সহজ করা হয়েছে 


পৃথিবীর ভারসাম্য টিকিয়ে রাখার অন্যতম এক উপাদান বিয়ে। চারিত্রিক নিষ্কলুষতা টিকিয়ে রাখার উপায়ও এই বিয়ে। হাদিসের ভাষায়, বিয়েতে রয়েছে নানামুখী বরকত। এটি লজ্জাস্থান ও দৃষ্টি হেফাজতের সর্বোত্তম পন্থা। তবে বিয়ের বহুবিধ কল্যাণ থাকলেও বর্তমানে বিষয়টিকে কঠিন করে তোলা হয়েছে। বিশেষত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে।

অভাব ও দারিদ্র্যের ভয়ে বিয়ের প্রতি যুবকদের একটি নীরব অনীহা ও শংকা সৃষ্টি হচ্ছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টির পেছনে আমাদের সমাজ অনেকাংশে দায়ী। অথচ হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি দারিদ্র্যের ভয়ে বিয়ে থেকে বিমুখ থাকলো, সে যেন আল্লাহর ব্যাপারেই মন্দ ধারণা পোষণ করলো।’ –সুনানে আবু দাউদ

আমাদের সমাজের যুবক শ্রেণি- পড়াশুনা, ক্যারিয়ার ও দারিদ্র্যের শঙ্কায় চিন্তাক্লিষ্ট হয়ে বিয়ে থেকে বিমুখ থাকছে। ফলশ্রুতিতে সমাজে অবৈধ সম্পর্ক, অনাচার, চরিত্র বিধ্বংসী নানা কার্যকলাপ বিকাশ লাভের সুযোগ অবারিত হচ্ছে। অথচ বিয়ের সহজীকরণের ব্যাপারে খোদ আল্লাহর সুস্পষ্ট ঘোষণা, ‘যদি তারা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ স্বীয় অনুগ্রহে তাদের স্বাবলম্বী বানিয়ে দেবেন।’ -সূরা নূর: ৩২

বর্তমান সময় যুবকদের বিয়ে করতে গিয়ে সর্বপ্রথম যে বাধার সম্মুখীন হন সেটা হল দেনমোহর, 

দেনমোহর হলো স্ত্রীর প্রতি সম্মানসূচক স্বামীর একটি আবশ্যিক দেনা। মুসলিম আইন অনুযায়ী, দেনমোহর হলো কিছু টাকা বা অন্য কোনো সম্পত্তি যা স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে বিয়ের মূল্যস্বরূপ পাওয়ার অধিকারী হয়। একজন নারীর অধিকারপ্রাপ্তিতে প্রথমেই দেনমোহরপ্রাপ্তির বিষয়টি চলে আসে।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর তোমরা নারীদেরকে তাদের মোহর স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে প্রদান করবে, সন্তুষ্ট চিত্তে তারা মোহরের কিয়দংশ ছেড়ে দিলে তোমরা তা স্বচ্ছন্দে ভোগ করবে।’ (সুরা আন-নিসা, আয়াত-৪)।

এ ছাড়া কুরআনের আরো এক আয়াতে দেনমোহরের অধিকার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘হে নবী! আমি তোমার জন্য বৈধ করেছি তোমার স্ত্রীদেরকে, যাদের মোহর তুমি প্রদান করেছো।’ (সুরা আল-আহজাব, আয়াত-৫০)।

দেনমোহর ইসলামে এমন একটি বিষয়, যার মাধ্যমে স্ত্রীর অধিকার পাকাপোক্ত করা হয়। পরিশোধের ভিত্তিতে দেনমোহর দুই ধরনের হয়। যথা- মুয়াজ্জল (আশু) দেনমোহর এবং মু-অজ্জল (বিলম্বিত) দেনমোহর।

আশু দেনমোহর চাওয়ামাত্র পরিশোধ করতে হয়। আর বিলম্বিত দেনমোহর হচ্ছে, দেনমোহরের যে অংশটুকু স্বামীর মৃত্যুর পর, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিয়ে বিচ্ছেদ বা তালাকের পর স্ত্রী পেয়ে থাকেন। বিলম্বিত দেন মোহর বিয়ের পর যেকোনো সময় পরিশোধ করা যায়। তবে মৃত্যু বা বিয়ে বিচ্ছেদের পর দেনমোহর অবশ্যই পরিশোধ করতে হয়। তখন দেনমোহর স্ত্রীর কাছে স্বামীর ঋণ হিসেবে থাকে।

প্রচলিত ধারণা রয়েছে যে, তালাকের কারণে দেনমোহর দিতে হয়। কিন্তু এটি একটি ভুল ধারণা। দেনমোহর বিয়ের শর্ত। তালাকের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই।

বিয়ে বিচ্ছেদ হোক বা না হোক দেনমোহর পরিশোধ করা স্বামীর দায়িত্ব।

বিবাহবিচ্ছেদ বা বিলম্বিত তালাক হয়ে গেলে কিংবা স্বামীর মৃত্যু হলে কোনো স্ত্রী তাঁর বিলম্বিত দেনমোহর আদায়ের জন্য পারিবারিক আদালতে মামলা করে তা আদায় করতে পারেন। তবে তা অবশ্যই তালাক বা স্বামীর মৃত্যুর তিন বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে। স্বামীর মৃত্যু হলে বকেয়া দেনমোহর একটি ঋণের মতো।


এটি শোধ করতেই হয়। স্বামীর উত্তরাধিকারীরা এটি প্রদানে বাধ্য। অন্যথায় মৃত স্বামীর উত্তরাধিকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করে আদায় করা যায়। স্ত্রী যদি আগে মারা যান, তা-ও দেনমোহর মাফ হয় না। স্ত্রীর উত্তরাধিকারীরা এই দেনমোহর পেতে হকদার। তাঁরাও মামলা করার অধিকার রাখেন।


দেনমোহর স্ত্রীর অধিকার সংরক্ষণের জন্য এবং স্ত্রীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দেয়া হয়। এটি মূলত স্বামীর ওপর আইনগত আরোপিত একটি দায়। মানুষের মাঝে একটি ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যে, বিয়ের রাতে স্বামী চাইলে স্ত্রীর কাছ থেকে দেনমোহর মাফ করিয়ে নিতে পারেন, তবে তা মাফ হয়ে যায়। কিন্তু আইন ও আদালতে এ ধরনের যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়।

দেনমোহরের টাকা মাফ করা যায়, তবে সে জন্য কিছু শর্ত আছে। স্ত্রীর পূর্ণ সমর্থন থাকতে হবে এবং কোনো ধরনের প্ররোচিত না হয়ে মাফ করতে হবে। কারও দ্বারা প্রভাবিত হওয়া যাবে না। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হওয়ার আগেই যদি বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে কিংবা স্বামীর মৃত্যু হয়, তবে দেনমোহরের অর্ধেক পরিশোধ করতে হবে।


আমাদের দেশে ১৯৬১ সালে প্রণীত মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন (কাবিননামা) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সেখানে বিবাহিত নারীদের দেনমোহরের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। স্বামী সেই দেনমোহর দিতে বাধ্য। এই আইনের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো প্রথমত: যাতে বিবাহের একটি লিখিত দলিল থাকে, দ্বিতীয়ত: যাতে দেনমোহরানার বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত থাকে। দেনমোহরের কোনো সুনির্দিষ্ট পরিমাণ নেই।


দেনমোহর বিয়ের সময় বা বিয়ের পরও নির্ধারণ করা যায়। উপযুক্ত দেনমোহর নির্ধারিত হয় বর-কনের পারস্পরিক ও সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে। এতে উভয়পক্ষের অভিভাবকদের সম্মতি থাকে। দেনমোহর নির্ধারণ কম বা বেশিতে আইনগত কোনো বাধা নেই, তবে টাকার অংশ স্বামীর আর্থিক সামর্থ্যের মধ্যে থাকা বাঞ্ছনীয়। দেনমোহর নির্ধারণের সময় সঙ্গতিপূর্ণ দেনমোহর নির্ধারণ করা উচিৎ। শুধু লোক দেখানোর জন্য কোটি টাকা দেনমোহর নির্ধারণ করা, এরপর, প্রথম রাতেই ৯৯ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা মাফ করিয়ে নেয়া- এগুলো মানবতা বিবর্জিত ঘৃণিত কাজ। অতএব শুধু অঙ্কের দিকে না তাকিয়ে সামর্থ্যের দিকেও তাকানো উচিৎ। দেনমোহরের পরিমাণ এতো বেশি নির্ধারণ করা উচিত নয় যা স্বামীর পক্ষে দেয়া অসম্ভব। কম মোহরানা নির্ধারণ কোনো সম্মানহানীর বিষয় নয়। আবার মোটা অঙ্ক নির্ধারণও কোনো গর্বের বিষয় নয়। বরের সামর্থ্যের বাইরে অতিরিক্ত মোহরানা দাবী করার আগে ভেবে দেখুন, নিজ পরিবারের নারীকে বিয়ে দিচ্ছেন, গরু ছাগলকে নয়।


স্বামী বা স্বামীর পরিবার উপহার হিসেবে স্ত্রীকে যা দেবে তা অবশ্যই দেনমোহর নয়। বিয়ের পর স্বামী স্ত্রীকে অনেক কিছুই দিতে পারেন। স্বামী যদি দেনমোহর হিসেবে স্ত্রীকে দেন, তবেই তা দেনমোহর বলে বিবেচিত হবে। 

কিছু বরপক্ষ আছেন, যারা উপহার সামগ্রী দিয়ে দেনমোহর পরিশোধ করার পর বিভিন্ন জনের কাছে বলে বেড়ায় "মেয়েকে আমরা এতো ভরি স্বর্ণ দিয়েছি" কিংবা "ফ্ল্যাটবাড়ি বা জমি দিলাম"। যেন সেগুলো দেনমোহর হিসাবে দেয়নি, অতিরিক্ত দিয়েছে।

 এক্ষেত্রে বিয়ের সময় গহনা, শাড়ি ইত্যাদির মূল্য দেনমোহরের একটি অংশ ধরে উসুল লিখে নেয়া হয়। সেক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, গহনা, শাড়ির মূল্য ধরে নিকাহনামার সংশ্লিষ্ট ধারায় উসুল হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করলেই তা দেনমোহরের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে যেভাবেই, যতোটুকু পরিমাণে দেয়া হোক না কেন প্রত্যেক মেয়ের উচিত তার দেনমোহর নামক অধিকার বিষয়ে সচেতন হওয়া।

আল্লাহ তায়ালা সকলকে বুঝার তৌফিক দান করুন,  

বিয়ে নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে পর্ব চলবে ইনশাআল্লাহ 

About the author

Taosin Bro Bd
Taosin Bro BD – Get the latest tech tutorials, web development guides, Blogger tips, and creative tools. Learn how to customize your blog, create engaging content, and enhance your online presence with expert tips and resources.

Post a Comment